আমি তানভীর, কানাডার টরন্টো শহরে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছি, কিন্তু মনিটোবা, আমার প্রথম প্রবাসী জীবনের শুরু যে জায়গা, সেখান থেকে অন্টারিও ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার কাছে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল। মনিটোবা থেকে অন্টারিও যাওয়ার এই যাত্রা ছিল অনেকটা নিজের পরিচিত সীমানা থেকে বেরিয়ে নতুন এক পৃথিবীতে পা রাখার মতো।
একদিন, মনিটোবায় আমার কাজের কিছু জরুরি বিষয়ে সমাধান শেষে, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমি কিছুদিনের জন্য অন্টারিও যাবো। প্রথমেই আমি টরন্টো, অন্টারিওকে গন্তব্য হিসেবে বেছে নিলাম। মনিটোবা থেকে টরন্টো যাওয়ার পথে আমার মনে নানা চিন্তা ঘুরছিল। কেমন হবে এই যাত্রা? নতুন শহরের কী কী রূপ দেখব? টরন্টোর জীবন কেমন?
প্রথমে, আমি বিমানে চড়ে রওনা দিলাম। উড়াল পথে একে একে নানা প্রাকৃতিক দৃশ্য চোখে পড়ছিল—সবুজ জমিন, বিশাল বনভূমি, নদী এবং পর্বতগুলোর দৃশ্য যেন মনোমুগ্ধকর। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, বিমানটি টরন্টো পৌঁছালো।
টরন্টোতে পৌঁছানোর পর, প্রথমেই আমার চোখে পড়ে শহরের বিশালতা। খাঁটি কানাডিয়ান আদর্শের প্রতিফলন যেন টরন্টোর প্রতিটি কোণে। শহরের অট্টালিকা, আধুনিক বিল্ডিংগুলো আর তার সাথে সুন্দর পার্কগুলো এক অন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করছিল। সিবিসি টাওয়ার, সেন্ট লরেন্স মার্কেট, এবং ডাউনটাউন টরন্টোর জীবন আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আমি বুঝলাম, টরন্টো শুধুই একটি শহর নয়, এটা একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র যেখানে পৃথিবীজুড়ে নানা জাতির মানুষ একত্রিত।
এরপর, আমি কিছু দিনের জন্য কুয়েনা, টরন্টো শহরের পাশের অন্যতম সুন্দর জায়গা, সেখানে গেলাম। বিশাল হ্রদ, সুন্দর বাগান আর শান্ত পরিবেশ যেন মনটাকে প্রশান্তি দিচ্ছিল। কুয়েনার নদীর ধারে হাঁটতে হাঁটতে আমি এক এক করে মনিটোবায় কাটানো শান্তিপূর্ণ দিনগুলোর কথা ভাবছিলাম। হ্যাঁ, টরন্টোর বিশালতা আমাকে মুগ্ধ করেছিল, তবে মনিটোবায় থাকা নৈকট্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয়।
একদিন, আমি নায়াগ্রা ফলস দেখার জন্য রওনা দিলাম। ফলসের দৃশ্য একেবারে মনমুগ্ধকর! এই বিশাল জলপ্রপাতের শক্তি আর সৌন্দর্য আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলেছিল। ঝর্ণার আওয়াজ, ঠাণ্ডা বাতাস আর পানির ঝাপটাগুলি যেন এক রহস্যময় অনুভূতির সৃষ্টি করেছিল। পুরো জায়গাটিতে বেড়াতে বেড়াতে আমি অনুভব করলাম যে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক সময় ভাষার চেয়েও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
এভাবে আমার অন্টারিও যাত্রা চলতে থাকে, এবং এক সময় আমি টরন্টোর রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে মনিটোবায় ফিরে যাওয়ার সময়টি মনে করতে শুরু করি। এই ভ্রমণ আমার জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। মনে হলো, আমি শুধু শহরই পরিবর্তন করেছি না, নিজেকেও নতুন করে চিনতে পেরেছি।
এটি ছিল আমার জীবনের একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা, যেখানে আমি শিখেছি—কানাডার প্রতিটি স্থান আলাদা, কিন্তু প্রত্যেকটির মধ্যে এক বিশেষ ভালোবাসা এবং সৌন্দর্য রয়েছে যা আমাদের চিন্তা এবং অনুভূতির পরিসরকে বিশাল করে তোলে।