Skip to Content

শাহবাগ আন্দোলন: কৃত্রিম প্ররোচনা নাকি গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ?

২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করলে, রায়ের প্রতি অসন্তোষ জানিয়ে শাহবাগে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে এই আন্দোলন শুরু হলেও, এর প্রকৃতি, উদ্দেশ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে শুরু থেকেই নানা বিতর্ক রয়েছে।

গণআন্দোলন নাকি রাজনৈতিক প্ররোচনা?

অনেকের মতে, শাহবাগ আন্দোলন একটি গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ, যেখানে হাজারো মানুষ ইতিহাসের দায় মেটানোর তাগিদে একত্র হয়েছিল। তবে, এই আন্দোলনের প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন, এবং রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সম্পৃক্ততা, আন্দোলনের স্বতঃস্ফূর্ততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

·         সরকারি সহযোগিতা:

শাহবাগ আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার এবং সরকারঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সক্রিয় ভূমিকা স্পষ্ট ছিল। রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমে আন্দোলনের ব্যাপক প্রচার, আন্দোলনকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা, এবং সরকারপন্থী নেতাকর্মীদের উপস্থিতি এই আন্দোলনকে আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে।

·         বিরোধী দল দমন:

শাহবাগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলাম এবং বিএনপির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জামায়াতের রাজনৈতিক ভিত্তি দুর্বল করতে সরকার আন্দোলনকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করেছে বলে অনেকে মনে করেন। বিশেষত যুদ্ধাপরাধের ইস্যুকে কেন্দ্র করে জামায়াত ও বিএনপির ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর কৌশল স্পষ্ট।

আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ দ্বৈততা:

শাহবাগ আন্দোলন একদিকে স্বতঃস্ফূর্ত গণচেতনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা গেলেও, এর পেছনে সংঘবদ্ধ পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক লক্ষ্য বিদ্যমান ছিল বলে সমালোচকরা মনে করেন। আন্দোলনের মূল বক্তব্য ছিল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি, যা দেশের অনেক মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার প্রতিফলন। কিন্তু সেই দাবি আদায়ের নামে একে একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে।

গণতান্ত্রিক চেতনার প্রশ্ন:

একদিকে শাহবাগ আন্দোলনকে গণতান্ত্রিক চেতনার মূর্ত প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে, যেখানে তরুণরা ঐতিহাসিক বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একত্রিত হয়েছিল। অন্যদিকে, এর রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা এবং সরকার-সমর্থিত প্রকৃতির কারণে এটি নিছকই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ হয়ে ওঠে বলে মনে করা হয়।

প্রভাব ও উত্তরাধিকার:

শাহবাগ আন্দোলন দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এটি যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মনোযোগ আকর্ষণ করলেও, এর রাজনৈতিক দিকটি আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতাকে অনেকাংশে ক্ষুণ্ন করেছে।

উপসংহার:

শাহবাগ আন্দোলন একদিকে ইতিহাসের সঙ্গে মানুষের আবেগের মেলবন্ধন ঘটালেও, এর রাজনৈতিক ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না। এটি কৃত্রিম প্ররোচনা এবং গণতান্ত্রিক চেতনার এক অদ্ভুত মিশ্রণ, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে এক জটিল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।

২০১৪ এর বিতর্কিত ও অবৈধ জাতীয় নির্বাচন নয় – একটি বিশ্লেষণ