আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পর এবং তাদের দোসরদের ভূমি দখল ও নৈরাজ্য চলছে। ব্যবহার করছে জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী চেতনার ব্যানার।
ভূমি দস্যু আসিফ (৫ আগষ্টের পর থেকে পলাতক)
৫ আগস্টের পতনের পর আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মীরা বিভিন্ন ছন্দবেশ নিয়ে তাদের দোসররা নতুন রূপে জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী চেতনার নামে বিভিন্ন অরাজক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে। তারা এই আদর্শের নাম ব্যবহার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, যা প্রকৃত অর্থে তাদের নিজস্ব স্বার্থ ও ক্ষমতা দখলের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।
ভূমি দখল: রাজনীতির আড়ালে অবৈধ সম্পত্তি অর্জন
ভূমি দখল আওয়ামী দোসরদের অন্যতম প্রধান কার্যকলাপ। ক্ষমতার কেন্দ্রের কাছে থেকে এরা বিশেষ সুবিধা অর্জন করে এবং সরকারি মদদপুষ্ট হয়ে অবৈধভাবে জমি দখল করে। যখনই স্থানীয় পর্যায়ে কেউ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যায়, তখন তাকে ভয় দেখানো হয়, হুমকি দেওয়া হয় কিংবা ভুল মামলা দায়ের করা হয়। এভাবে তারা সাধারণ জনগণের সম্পত্তি কেড়ে নিচ্ছে এবং তাদের জীবনধারণ কঠিন করে তুলছে।
বিশেষ করে, বিভিন্ন ধর্মীয় বা জাতীয়তাবাদী অজুহাত দিয়ে জমি দখলের বিষয়টিও বেশ প্রবল হয়ে উঠেছে। যেমন, কোনো ভূমি বা প্রতিষ্ঠানকে ইসলামিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করে সেটিকে দখল করে নেওয়া হচ্ছে, অথচ পরবর্তীতে সেখানে নিজেদের ব্যবসা বা অন্য কাজে ব্যবহার করছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড ধর্মীয় চেতনার বিকৃতি ঘটায় এবং সামগ্রিকভাবে সমাজকে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দেয়।
ভূমি দস্যু আসিফ পালিয়ে গেলেও তার সহযোগীরা বিএনপি জামায়াতের নাম দিয়ে বহু জমি দখল করে আছে।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পর তাদের দোসরদের ভূমি দখল, নৈরাজ্য এবং আদর্শের অপব্যবহারে দেশ এক সংকটময় পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী চেতনার প্রকৃত মর্মার্থ থেকে বিচ্যুত হয়ে তারা নিজেরা লাভবান হতে চায় এবং সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করে রেখেছে।
মোহাম্মদপুরেও সক্রিয় আওয়ামী ভূমি দস্যুরা
মোহাম্মদপুরের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, সলু, সাদেক খান, সেন্টু, আসিফ আহমেদ ও তারেকুজ্জামান রাজীব, চিনু মিয়া, পাগলা মিজান, হাসু, ইকবাল, তুহীন, নবী, হারিস, কাসেম — এরা বর্তমানে গা ঢাকা দিয়ে দেশে বা দেশের বাইরে থাকলেও বৃহত্তর মোহাম্মদপুর এলাকার অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণের চাবি এখনও তাদের হাতেই।
২০২৩ সালে দখল করে এই সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয় আসিফ, এটি ৫ ই আগষ্টের পর ফেলে দেওয়া হয়
৫ আগস্টের পর কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ পালিয়ে যায়, কিন্তু তার লোকজন বিএনপি জামায়াতের ব্যানারে এখনও বেশ কিছু জমি দখল করে আছে। তার মধ্যে একটি জমির বিষয়ে সরে জমিনে একজন ভূক্তভোগীর বক্তব্য এখানে কিছু ছবি ও ভিডিওসহ তুলে ধরা হল:
ভূক্তভোগীর বক্তব্য
১৯৯৫ সালে আমার বাবা মরহুম আবুল খায়ের এই জমিটি ক্রয় করেন। তখন এখানে নিচু জায়গা ছিল। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন হাউসিং কোম্পানিগুলো এসে ট্রলারে করে বালিতে এনে মেশিন লাগিয়ে ভরাট করে। তখন আমরা চন্দ্রিমা মডেল টাউন নামে একটি হাউসিং কোম্পানির সদস্যবোধ গ্রহণ করি, অর্থাৎ আমার বাবা চন্দ্রিমা হাউসিংয়ের সদস্যপদ গ্রহণ করেন, যার সদস্য নম্বর হচ্ছে ২৭৫।
চন্দ্রিমা হাউসিং অন্যান্য হাউসিংয়ের মতোই বালি দিয়ে পুরো এরিয়া ভরাট করে এবং প্লট সিস্টেম করে। সেখানে রাস্তা, মসজিদ, মাদ্রাসার জায়গা, ঈদগা, কবরস্থান এগুলোর ব্যবস্থা করা হয়। পুরো এলাকা প্লটিং হওয়ার পরে চন্দ্রিমা হাউসিং আমার বাবার নামে প্লট বরাদ্দ দেয় এবং আমাদেরকে একটি প্রত্যয়ন পত্র দেওয়া হয়। আমাদের প্লট নম্বর হচ্ছে ২৬, রোড নম্বর ৬, ব্লক সি, চন্দ্রিমা মডেল টাউন, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এই প্লটে দখলে ছিলাম। ২০২৩ সালে তৎকালীন তেত্রিশ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের ভাতিজা আসিফ আহমেদ প্রায় ৪০-৫০ জন লোক নিয়ে এসে আমাদের প্লটে একটি দোকান ছিল, ওই দোকান ভেঙে সরিয়ে দেয়। এবং দেওয়াল ছিল, ওই দেয়ালটিকে আরো উঁচু করে। পুলিশ চলে গেলে তারা দ্বিতীয় দফায় সন্ধ্যায় দুটি টিনের ঘর তৈরি করে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে, অত্র এলাকায় তৎকালীন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের নেতৃত্বে আমাদের জায়গাটি দখল হয়েছিল। উক্ত কাউন্সিলর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের উপর প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে বেশ কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
পরবর্তীতে যখন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যায়, তখন কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ বুঝতে পারে, এখন আর সে তার এই অপকর্মগুলো এখানে করতে পারবে না। তখন সে নিজেও পালিয়ে যায়, কিন্তু তার সেদিনের দখল করার যে গ্রুপ, তাদের একটি অংশ এখানে রয়ে যায়। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গোলাম সামদানী এবং ইজহারুল হক সেতু। তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করে। আমরা আমাদের জমিতে যেতে পারছি না।
আমরা বিভিন্ন সময় থানায় অভিযোগ করি, আমরা বসিলা সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করি। জমিটি উদ্ধারের জন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে থানায় এবং সেনা ক্যাম্পে যোগাযোগ করি, কিন্তু আমরা তেমন কোনো সহযোগিতা পাইনি। ইতোমধ্যে কাউন্সিলর আসিফ পালিয়ে যাওয়ার পর, তার সহযোগী গোলাম সামদানী ও ইজহারুল হক সেতু এই জায়গাটি একটি ডেভেলপার কোম্পানির সাইনবোর্ড লাগিয়ে ফ্ল্যাট বিক্রি করছে। আমরা বিভিন্ন সময় কাজে বাধা দিতে গেলে আমাদেরকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় আমাদের ন্যায্য জায়গা আমরা পাওয়ার ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করি।
প্রশ্ন : ১
আপনি জামায়াতের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কি? তাদের প্রতিক্রিয়া কী?
উত্তর:
জামায়াতের লোকজনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। সে ক্ষেত্রে জামায়াতের একজন জামায়াত মনা এডভোকেট আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং উনি আমাকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেন। বিভিন্ন সময় থানায় তাদের সাথে আমাদের বসা হয়েছে এবং যারা জমি দখল করেছে তাদের সাথেও আলোচনা হয়েছে। তখন এডভোকেট সাহেব ছিলেন। এডভোকেট সাহেব সিএসআরএস ও মহানগর নকশা দিয়ে একটি পেনড্রাগ্রাফ তৈরি করেন। এই পেনড্রাগ্রাফ তৈরি করে দেখা যায় যে, এই প্লটটি মূলত আমাদের, তারা যেভাবে দাবি করছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অসত্য।
পরবর্তীতে আমরা তাদেরকে বলি যে, থানা প্রশাসনের সহায়তায় যে হাউসিং আছে, সেই হাউজিংয়ের একজন সার্ভেয়ার এবং যারা আমাদের জমি দখল করেছে, তাদের একজন সার্ভেয়ারের সহযোগিতায় আমরা মাপতে চাই। প্রথমে তারা এ বিষয়ে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে তারা রাজি হলেও, মাপার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি, বললেই চলে।
তবে তারা একটা পর্যায়ে এসে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, এ জমিটির অর্ধেকেরও বেশি অংশ আমাদের। তারা বিভিন্নভাবে বলতে চায় যে, উক্ত জমিটির যে অংশ আমাদের, ওই অংশটুকু তাদের কাছে বিক্রি করার জন্য এবং যা বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম। এ ক্ষেত্রে আমরা এতে রাজি হইনি।
আমরা মনে করি, যেহেতু জমিটি আমাদের এবং তারা বলছে আমাদের অর্ধেকের বেশি, সেক্ষেত্রে তারা আমাদের কাছ থেকে একটি বায়না দলিল করে মূলত বৈধ মালিক হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে যদি তারা একটি বায়না সূত্রে প্রয়োগ করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়, তাহলে আমাদের আর কিছুই করার থাকবে না।
প্রশ্ন : ২
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এই বিষয়ে কী বক্তব্য প্রদান করছে?
উত্তর:
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলেছেন, এই মুহূর্তে আমাদের শক্তিশালী ফোর্স নেই। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে পারব না। তবে, আপনারা যদি আদালতে মামলা করেন এবং আদালত যদি আমাদেরকে কোনো নির্দেশ দেয়, সেক্ষেত্রে আমরা যতটুকু করার করব।
প্রশ্ন : ৩
বিএনপির পক্ষ থেকে কী ধরনের মন্তব্য বা অবস্থান জানানো হয়েছে?
উত্তর:
আমরা তো বিএনপি'র কাছে যাইনি। আমাদের একজন প্রতিনিধিকে তারা বলছে যে, উদ্ধার করে দেবে, কিন্তু এখানে তাদের একটি শর্তসাপেক্ষ বিষয় রয়েছে।
প্রশ্ন : ৪
মামলার দায়ের হয়েছে কি? যদি হয়ে থাকে, তার অগ্রগতি কী?
আমরা এখনও মামলা করিনি। আমরা ভেবেছিলাম প্রশাসনের সহযোগিতা পেয়ে একটি সমাধানে আসব, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি এবং আদৌ সম্ভব হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। এমত অবস্থায় আমরা মামলা করার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছি।
প্রশ্ন : ৫
গোলাম সামদানী এবং ইজহারুল হক সেতু কোন কোন রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট?
উত্তর:
গোলাম সামদানী এবং ইজহারুল হক সেতু এরা এতদিন ধরে সন্ত্রাসী কাউন্সিলর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সহযোগী ছিলেন, যিনি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের ভাতিজা। এলাকার মানুষ জানেন, উনি দিনে দুপুরে গুলি চালাতে দ্বিধা করেন না। গোলাম সামদানী এবং ইজহারুল হক সেতু এই দুই ব্যক্তি সর্বদা কাউন্সিলর আসিফ আহমেদের সাথে থেকে কাজ করতেন। এমনকি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ যতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটান, প্রত্যেকটির সাথে এই দুই ব্যক্তি জড়িত।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, গোলাম সামদানী এবং কাজী ইজহারুল হক সেতু বর্তমানে জামায়াতের রাজনীতির সাথে তারা জড়িত বলে প্রচার করেন।
-------------------------------------------------------
জমির প্রকৃত ও বৈধ মালিক আবুল খায়েরের নামে সাইনবোর্ড
৫ই আগস্টের পর ৬ই আগস্ট মোঃ আবুল খায়েরের নামে সাইনবোর্ডটি মূল মালিকগণ যদিও পরবর্তীতে তারা এটি ফেলে দেয় এবং কাজ শুরু করে।
বর্তমানে তারা এই ব্যানারে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দখল ও তার উপর ভবন নির্মান অব্যাহত রেখেছে।